লালমনিরহাটের সীমান্তঘেঁষা পাটগ্রাম উপজেলা। একসময় গ্রামের অনেক উঠোন, ঘরপেছনের খালি জায়গা আর অনাবাদি পতিত জমি বছরের পর বছর অকেজো পড়ে থাকত। কৃষকেরা জানতেন না এই ছোট ছোট টুকরো জমিই হতে পারে পরিবারের পুষ্টির ভাণ্ডার, হতে পারে নতুন আয়ের ক্ষেত্র।
২০২৪ সালে উপজেলা কৃষি অফিস “অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প” হাতে নেওয়ার পরই বদলে যায় চিত্র। গ্রামজুড়ে শুরু হয় সবুজ জাগরণ।
প্রশিক্ষণেই বদলে গেল ভাবনাঃ
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষক-কৃষাণীদের একত্রিত করা হয় কৃষি অফিস চত্বরে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা শেখালেন বাড়ির আঙিনায় শাকসবজি চাষের পদ্ধতি। অর্গানিক সার ও কম্পোস্ট তৈরির কৌশল, জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ ফসল উৎপাদন পদ্ধতি।
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় নারীদের ওপর, কারণ পারিবারিক পুষ্টিবাগানের প্রধান চালিকাশক্তি তারাই।
আঙিনার ছোট বাগান, পরিবারের বড় হাসিঃ
গোলাবাড়ী এলাকার লায়লা বেগম কখনও ভাবেননি ঘরের পেছনের মাত্র ৪ শতক জমিতে এত কিছু উৎপাদন করা সম্ভব। প্রকল্পের সহায়তায় তিনি গড়ে তোলেন
লাউয়ের মাচাঃ
টমেটো ও বেগুনের সারি। ধনিয়া, পুদিনাপাতা, ঢেঁড়শ, শিমসহ নানা সবজি গাছের বাগান। দুই মাসেই পরিবারের কেনা সবজির খরচ নেমে আসে অর্ধেকে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে প্রতিবছর আয় করেন কয়েক হাজার টাকা।
পতিত জমির রূপান্তর—সবুজের হাসিঃ
পাটগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়নের বহুদিনের পতিত জমি আজ সবুজে ভরপুর। যুবকদের উদ্যোগে গড়ে উঠছে-
মৌসুমি সবজি ক্ষেত মাল্টা ও আমলকীর বাগান মাচায় শসা ও করলার বিস্তৃত প্লট
শুধু খাদ্য উৎপাদনই নয়, গ্রামঞ্চলের তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের পথও তৈরি হয়েছে।
প্রকল্পের কার্যক্রমে প্রাণ ফিরেছে গ্রামজুড়েঃ
উপজেলা কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের সমস্যাগুলোর দিয়ে থাকে সমাধান। শেখানো হচ্ছে—
কম্পোস্ট পিট ব্যবস্থাপনাও বীজ সংরক্ষণ প্রযুক্তি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি ফলে দিন দিন পরিবারের স্বনির্ভরতা বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মতামতঃ
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান,
“পাটগ্রামের প্রতিটি পরিবারকে পুষ্টিতে স্বনির্ভর করতে আমরা কাজ করছি। যেসব জায়গা আগে অনাবাদি পড়ে ছিল, সেসব জমিতে আজ সবজির সমারোহ। নারীরা এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে।এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। আগামী দিনে আরও বেশি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।”
নতুন স্বপ্নের পথে এগোচ্ছে পাটগ্রামের কৃষি:
এই প্রকল্প পাটগ্রামে এনেছে কৃষির দৃশ্যমান পরিবর্তন-
অপুষ্টি কমছে আয় বাড়ছে পতিত জমি কাজে লাগছে কৃষক।
নারীর অবদান আরও স্বীকৃতি পাচ্ছেঃ
যে জায়গাগুলো একসময় ঝোপঝাড়ে ভরা ছিল, সেখানে এখন সবুজের সমারোহ। ক্ষেতে ঝুলছে লাউ, টমেটো লাল হয়ে আছে, শিশুরা দৌড়াচ্ছে আনন্দে।
কৃষকরা বলছে—“পুষ্টি বাগান শুধু বাগান নয়, এটি পরিবারের সুখের বীজ।