চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে,বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া,দোহাজারী,সাতকানিয়া,লোহাগড়া,বাশখালী,কর্ণফুলী ও চন্দনাইশ উপজেলায় এ প্রকোপ বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ২৬৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস।
ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে সব ইউনিয়নে একটি করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ৫টি করে মেডিকেল টিম পুনর্গঠন করে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী সই করা পৃথক অফিস আদেশে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে (০৩) সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে সময়োপযোগী উদ্যোগসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে কমিটিকে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি। অন্য সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি (সদস্য সচিব) ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা (সদস্য)। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জনের আদেশে বলা হয়েছে , সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুত রাখতে হবে। ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগের চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। গাইডলাইন অনুযায়ী কলেরা শনাক্তকরণ কিট ব্যবহার করতে হবে।
ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগের চিকিৎসার তথ্য ডিআইএইচএস-২ এর মাধ্যমে রিপোর্ট করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লে সিভিল সার্জন অফিস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবহিত করতে হবে। ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগের স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। দৈনন্দিন ডায়রিয়া রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে পাঠাতে হবে।
আরেক আদেশে উল্লেখ করা হয়, প্রতি ইউনিয়নে একটি ও প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে মেডিকেল টিম পুনর্গঠন করে প্রস্তুত রাখতে হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা কন্ট্রোল রুম (ফোন নম্বর ০২৩৩৩৩৫৪৮৪৩) খোলা থাকবে। ডায়রিয়া বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা একান্ত জরুরি। স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ ও স্যানিটারি পরিদর্শকদের ফোকাল পারসন মনোনীত করে সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া ডায়রিয়া বা পারিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে মসজিদ ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে। মাইকিংয়ে ‘নিরাপদ পানি পান করা নিশ্চিত করতে হবে’, ‘স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে’, ‘বাসি ও খোলা জায়গায় খাবার গ্রহণ না করা’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরিধান করা’, ‘হাত ধোয়ার অভ্যাস নিশ্চিত করা’র বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে প্রচার করতে হবে। একই সঙ্গে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের বাজার মনিটরিং ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার ও সব কমিউনিটি ক্লিনিকে ডায়রিয়া সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়াতে সিএইচসিপিদের (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বার্তা সম্পাদক মোঃ এনামুল হক রুবেল।