নোটিশ:
  • আরো উন্নত ও সুপার ফাষ্ট ওয়েব ডেভেলপের কাজ চলছে।  আমাদের সাথে থাকার জন্য দেশ-বিদেশের সকল পাঠক ও সাংবাদিক'দের ধন্যবাদ।

কর্ণফুলীর ভাঙ্গনে হাজারো পরিবারের কান্না।

এম মনির চৌধুরী রানা
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২১ মে, ২০২৩
হাজারো পরিবারের কান্না
109.6kভিজিটর

চট্টগ্রামে বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা ইউনিয়নের তালুকদার বাড়ির মোস্তফা খাতুন (৮০) খালের দ্বারে একমাত্র সহায় সম্বল দেড় গন্ডা জায়গা জুড়ে তার বসবাস। সেই জায়গাটি ও এখন ভাঙনের করলগ্রাসের মুখে। তার দুই ছেলে দিনমজুর। আর্থিক সংকটের কারণে আরেকটি জায়গাও কিনতে পারছে না। অনেকটা অসহায় অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। খাল ভাঙনের ফলে তার ঘরটিও যে কোন মুহূর্তে খালে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির পাশ ঘেঁসেই বোয়ালখালী খাল। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, এই খালের মা-বাপ কে? আমাদের কান্না কি তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না? স্থানীয় চেয়ারম্যান অনেক আগে নাম, ঠিকানা লিখে নিয়ে গিয়েছিলো ঘর দিবে বলে। সেটিও তিনি পেলেন না। নির্বাচন আসলে সবাই ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, নির্বাচনের পরে আর খোঁজ খবর রাখেনা কেউ।

বোয়ালখালী খালের দুমারটেক থেকে আছু মাঝির বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার খাল ভাঙনের ফলে দুর্ভোগে রয়েছে এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের প্রায় ৯ শতাধিক মানুষ। এক সময় যেখানে ঘর-বাড়ি, কৃষিজমি ও রাস্তা ছিলো সেগুলো বিলীন হয়ে গেছে খাল ভাঙনের ফলে। বর্তমানে যারা খালের পাড়ে বসবাস করছেন তারাও অনেকটা নিঃস্ব হওয়ার পথে। খালের অপর পাশে পটিয়া উপজেলা।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মোজাফফর আহমদ (৬৭) বলেন, বর্তমানে তার ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলে রিক্সাচালক। খাল ভাঙনে তার ঘর বিলীন হওয়ার পথে। অর্থের অভাবে জায়গা কিনতে পারছে না। শ্রীঘ্রই খাল ভাঙন রোধে সরকার কোন পদক্ষেপ না নিলে তিনি পথে বসবেন।

কর্ণফুলী নদীর শাখা খাল ছন্দারিয়া। খাল ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তাঘাট। জমি আর ভিটেমাটি অনেকটা খালে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে উঠোন ভিজে ঘরেও চলে যায়। পুকুরের পাড় ভেঙ্গে খালের সাথে সংযোগ হয়ে জোয়ারের পানি পুকুরে ঢুকে যায়, যার ফলে মাছ চাষ করাও সম্ভব হয় না। খালের পাড়ের মানুষরা আতঙ্কে থাকে সব সময়। বর্ষা মৌসুমে তীব্র থেকে তীব্র হয় খালের ভাঙন, জোয়ারের পানি দেখলে মনে হয় এই যেন মাথা গুজারঁ শেষ সম্ভল টুকু কেড়ে নিয়ে যাবে এই জোয়ার রাক্ষুসি নদী, খালের জোয়ার আতংক বাড়ায় সব সময় বাড়ে দুর্দশা। নির্ঘুম রাত কাটে নবাব আলী চৌধুরী বাড়ির মানুষগুলোর। ঘরের বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে দিনের পর দিন এ কষ্ট ভোগ করে চলেছেন তারা।

আরেক বাসিন্দা ইউছুফ আলী বলেন, নোয়াইত্তাদের বাড়ি থেকে পূর্ব বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে। তার বাড়ির পিছনের অংশ খাল ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

আবুল কাশেম বলেন, সম্প্রতি খালের ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন ওই এলাকার অনেকে। তারা এখন পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। খাল ভাঙনের কারণে আমতল থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ নবাব আলী চৌধুরী সড়কটির প্রায় অংশ বিলীন হয়ে গেছে।

হোসনারা বেগম বলেন, বালির ড্রেজার চলার কারণে তাদের এই অবস্থা। ড্রেজারের ঢেউয়ে ভাঙছে খালের পাড়। চলাচলের জন্য ভালো কোন রাস্তা নাই। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে কষ্ট হয়, তারা উপযুক্ত হলেও বিয়ে দিতে পারে না খাল ভাঙন ও সড়কের বেহাল দশার কারণে। সড়কের অনেক অংশ খালে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ঘর-বাড়িও রক্ষা করা দায়।

একই অবস্থা চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া গ্রামে। কর্ণফুলী নদীতে বিলীন হয়েছে ওই এলাকার অন্তত ৫০ টি পরিবারের বসতভিটা। ভাঙ্গণের মুখে রয়েছে আরো অন্তত ১০০টি পরিবার। চরণদ্বীপ ইউনিয়নের নয়া রাস্তার মাথা থেকে ফকিরাখালী জেলে পাড়া পর্যন্ত ১৬০ মিটার নদী ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা, সড়কসহ নানা সামাজিক স্থাপনা। এ পরিস্থিতিতে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। বিলীন হচ্ছে জনপদ।

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ থেকে ২০ বছরে গ্রামের ৯৫ ভাগ পরিবার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। অধিকাংশ পরিবার দুই-তিনবার ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছে। কিন্তু এ ভাঙ্গন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী ভাঙ্গনের ফলে শত পরিবার হুমকি মধ্যে আছে। বেশির ভাগ পরিবার অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি স্থাপন করেছে।

নদীর কিছু জায়গায় বস্তা ও ব্লগ দেয়া হলেও নয়া রাস্তার মাথা থেকে ফকিরাখালী পর্যন্ত কোন ব্লগ না দেয়ায় ভাঙ্গনের ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ ঈদু আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় ভাঙ্গন অব্যাহত আছে। গত কয়েক বছরে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এতে এলাকার মমতাজ মিয়া, দুদু মিয়া, এমতাজ মিয়া, আবদুল হক, রাজা মিয়া, নুর মিয়া, লাল মিয়া, ইউনুচ মিয়া, গোলাফুর রহমান, এজলাস মিয়া, শাহ আলম, বদিউল আলম, জাফর আলম, বাহাদুর আলম, কফিল উদ্দিন, বাবর উদ্দিন, সালা উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, সরওয়ার উদ্দিন, নুর হোসেন, আবুল হোসেন, শামশুল আলম, জানে আলম, জাহেদুল আলম, ছালেহ আহমদ, ছাবের আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম পেয়ার মোহাম্মদ, জাফর আহমদ, কাসেম আলী, হাসেম আলী, আলি মিয়া, মোঃ মানিক ও ইউছুপ আলীসহ অন্তত ৩৩টি পরিবারের বসতবাড়ি গ্রাস করেছে কর্ণফুলী নদী। এর মধ্যে অনেকের একমাত্র সম্বল ছিল শুধু বসতভিটা। নদী ভাঙ্গনের ফলে সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান অনেকেই।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ বাবর উদ্দীন বলেন, ১৯৯০ সালে আমি এই এলাকায় বসবাস করেছিলাম। তখন আমি ছোট ছিলাম। নদী ভাঙ্গনের কারণে আমাদের বাড়িটা বিলীন হয়ে যায়। আমরা অন্যত্র বসবাস স্থাপন করি। নজর মোহাম্মদ বাড়ির লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এই নদী ভাঙ্গন কবলের ফলে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, বোয়ালখালীর জন্য ১৫৪ কোটি টাকার প্রজেক্ট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে এখন প্ল্যানিং এ গেছে। এরপর একনেকে উঠবে। আশা করছি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রজেক্ট অনুমোদন হতে পারে।

নিউজ শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
Copyright©2025 WSB News24 All rights reserved
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x