রিয়াদুন্নবী রিয়াদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার পরিবর্তে চলছে অনিয়মের মহোৎসব। ১,১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই ৫০ শয্যার হাসপাতাল। তবে সেবা প্রদানের চিত্র হতাশাজনক।
জনবল সংকট, বিকল যন্ত্রপাতি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এবং চিকিৎসকদের সময়ানুবর্তিতার অভাবে হাসপাতালটি কার্যত অকার্যকর।সরেজমিনে জানা যায়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের পরিবর্তে অনেক সময় টেকনোলজিস্টরা রোগী দেখছেন। ইসিজি পরীক্ষার জন্য পাঁচটি মেশিন থাকলেও কক্ষ তালাবদ্ধ। কেবল একটি মেশিন সচল, সেটিও চালাচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।
অন্যদিকে, ফিল্ম সংকটের কারণে এক্স-রে সেবা বন্ধ। রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে বেসরকারি প্যাথলজিতে পরীক্ষা করাতে।নিয়মিত সকালে হাসপাতালে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসকরা প্রায়ই নির্ধারিত সময়ের পর আসেন। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টার আগে অনেক চিকিৎসক আসেন না এবং দুপুর ১২টার পর কিছু চিকিৎসক কক্ষ ত্যাগ করেন। এতে রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সেবা না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে।রোগীদের কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গর্ভবতী আয়শা সিদ্দিকা একটি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ১৫০ টাকার বদলে ২০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট স্বপ্না বলেন, “মেশিন অকার্যকর থাকায় বাইরে থেকে সেবা নিয়ে আসতে হচ্ছে।
এজন্য বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে।” তবে অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ইচ্ছাকৃতভাবে অকেজো রেখে রোগীদের বেসরকারি প্যাথলজিতে পাঠানো হয় এবং সংশ্লিষ্টরা কমিশন পান।হাসপাতালের ২১ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ১০ পদের মধ্যে তিনটি শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির ৯৩টি পদের মধ্যে ৩৬টি পদ শূন্য। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী, ফার্মাসিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদও ফাঁকা।অন্য ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকদের নিয়ে এসে হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের পদটি শূন্য। ডেন্টিস্ট ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে থাকায় টেকনোলজিস্ট দিয়ে দায়িত্ব চালানো হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলেমুল বাশার বলেন, “এখানে জনবল সংকট রয়েছে। ডেন্টিস্ট অনুপস্থিত থাকায় টেকনোলজিস্ট দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। সিন্ডিকেটের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”