রিয়াদুন্নবী রিয়াদ নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান বাবলুর প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার উত্তম জাফরগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে। দলীয় ক্ষমতা, স্বৈরাচারী শাসন ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধান লঙ্ঘন করে সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান বাবলুর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সহকারী অধ্যাপক মো. আমিরুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ দেওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেনের মামা হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিরুজ্জামান।
এই নিয়োগের মাধ্যমে বাবলু মাদ্রাসার প্রশাসনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এবং তার পিএস আব্দুল মতিনকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার শুরু করেন।সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান বাবলুর বরাদ্দকৃত দুই লাখ টাকা মাদ্রাসার মাঠ ভরাট প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এই অর্থের বড় একটি অংশ আত্মসাৎ করা হয়। বাবলুর নির্দেশে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে মাদ্রাসার অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এই আর্থিক অনিয়মে তার পিএস আব্দুল মতিন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিরুজ্জামান সরাসরি জড়িত ছিলেন।
মাদ্রাসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার মামলায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিরুজ্জামান গ্রেপ্তার হলেও, সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান বাবলু এবং তার পিএস আব্দুল মতিন এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখনো পলাতক রয়েছেন। স্থানীয়দের মতে, বাবলুর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি আইনের আওতার বাইরে রয়েছেন।
বাবলুর দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের কারণে মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। আরবি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক মুনসুর আলীকে মিথ্যা অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়, যা শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।মো. আমিরুজ্জামান অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে মাদ্রাসায় অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দলীয় প্রভাব কায়েমে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি মাদ্রাসায় নিয়মিত উপস্থিত না থেকে সাবেক এমপি বাবলুর সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।
বাবলুর নির্দেশেই তিনি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর অভিভাবক শাহিনুর ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ থেকে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নেই। জেলে থাকার পরও আমিরুজ্জামান নিজ পদে বহাল। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার কার্যক্রম ঠিকভাবে হচ্ছে না। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত।
অতিদ্রুত ফ্যাসিবাদের দোসর অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামানকে বরখাস্ত করে প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হোক। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত তার মামা। এ জন্যই তার বিরুদ্ধে ডিসি এক সপ্তাহ গেলেও ব্যবস্থা নেননি।রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি। আমাদের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ডিসি।
এ বিষয়ে ডিসি স্যার ব্যবস্থা নেবেন। এতদিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? জবাবে তিনি বলেন, ওনি আমার আগে থেকেই পরিচিত। আত্মীয় নয়; কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।