চট্টগ্রামে পটিয়া উপজেলার ১১নং কেলিশহর ইউনিয়ন পরিষদে বিচার চলাকালীন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ফটো সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল নামের এক ব্যক্তির ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত সুজন কৃষ্ণ শীলের ছেলে এবং তিনি দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকায় কর্মরত রয়েছে। হামলার ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফটো সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীলের সাথে তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ শীলের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিষয়ে বিরোধ চলছিলো। তারই প্রেক্ষিতে বিশ্বজিৎ পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্য ১১নং কেলিশহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল পরিষদ কার্যালয়ে সালিসি বৈঠকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উভয়কেই যথা সময়ে পরিষদ কার্যালয়ে হাজির থাকার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান। নির্দেশ অনুযায়ী উভয় পক্ষই হাজির হন।
এসময় আবেদনকারীর পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নিখিল দে। পরবর্তীতে বিচারকার্য আরম্ভ হলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে বিশ্বজিৎ শীলের পক্ষের প্রতিনিধি মেম্বার নিখিল দে উত্তেজিত হয়ে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সুরঞ্জিত শীলের ওপর হামলা করে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে নষ্ট করে ফেলে।
এসময় পরিষদের ভিতর উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল বাদী হয়ে মেম্বার নিখিল দে ও তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ শীলের নাম উল্লেখ করে পটিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন বলে জানা যায়, যাহার জিডি নং-২৫৯। ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মেম্বার নিখিল দে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সুরঞ্জিত আর আমি একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
তাদের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে জমি জমা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ চলছিলো। বিরোধের জের ধরে গত ৫ এপ্রিল চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদে সালিসি বৈঠকে দুই ভাইকে ডাকা হয়। তখন আমি ছিলাম ওই বৈঠকে বিশ্বজিৎ শীলের পক্ষের প্রতিনিধি। বৈঠক চলাকালীন সুরঞ্জিত তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ শীল এবং আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে অশালীন আচরণ করতে থাকলে অনেক চেষ্টা করে থামাতে না পেরে রাগের মাথায় তাকে আমি ধাক্কা দেই।
এর সূত্র ধরে আমাদের উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে।
পরিষদে বিচার চলাকালীন মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পরিষদের চেয়ারম্যান সরোজ কান্তি সেন নান্টু বলেন, বাদী বিশ্বজিৎ শীল আর বিবাদী সুরঞ্জিত শীল তারা আপন দুই ভাই।
তাদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি ও আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনেক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিলো এবং অনেকবার সামাজিক ভাবে সালিসি বৈঠকও হয়েছে। তবুও তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।
বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশ্বজিৎ পরিষদে আবেদন করলে গত ৫ এপ্রিল বিকাল ৫টায় তাদের দুই ভাইকে পরিষদে ডেকে আনা হয়। এসময় বাদী বিশ্বজিৎ শীলের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নিখিল দে। বিচারকার্য শুরু হলে এক পর্যায়ে সুরঞ্জিত ও বিশ্বজিৎ তর্কে জড়িয়ে পড়ে।
এসময় প্রতিনিধি নিখিল মেম্বারের সাথে সুরঞ্জিতের কথা কাটাকাটির জের ধরে নিখিল সুরঞ্জিতের ওপর হামলা করলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে। এসময় আমি তাদের আমি অনেক বাঁধা দিয়েছিলাম, তারা কেউ আমার কথা শুনেনি। পরবর্তীতে ওইদিন সালিসি বৈঠক স্থগিত করে আগামীতে আরেকটি সালিসি বৈঠকের দিন ধার্য্য করে বৈঠক স্থল সমাপ্তি করি।
অন্যদিকে থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের বিষয়ে তদন্তে দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার উপ-পরিদর্শক মোঃ বিল্লল হোসেন বলেন, পরিষদে বিচার চলাকালীন মারামারির ঘটনায় সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল বাদী হয়ে লিখিল দে ও বিশ্বজিৎ শীল নামের দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ঘটনা বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। তদন্ত শেষে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি।