হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের বিল নিতে নবজাতক বিক্রি, পরিচালক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৪
225.9kভিজিটর

রিয়াদুন্নবী রিয়াদ নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় আয়হীন স্বামীকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে আসেন লাবনী আক্তার (২২)। পূর্বপরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হন নগরীর হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে। সিজারে সেখানে লাবনীর কোলে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। হাসি ফুটে লাবনীর মুখে। কিন্তু সেই হাসি মলিন হতেও বেশি সময় লাগেনি।

হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারার জন্য হাসপাতালের পরিচালক সেই সন্তানকে বিক্রি করে দেন। এমনি ঘটনা ঘটেছে রংপুর নগরীর বাসটার্মিনাল এলাকার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে।
পুলিশ এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক, নবজাতক কেনা দম্পতিকে আটক করেছে। উদ্ধার করে নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন। এ সময় নবজাতক ও তার মা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, রংপুর সদরের বুড়ারঘাট এলাকার লাবনী আক্তারের স্বামীর আয়ের কোনো উৎস নেই। কয়েক দিন আগে তাঁরা বাচ্চা প্রসবের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন। ১৩ জানুয়ারি নগরীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ২০২ নম্বর রুমে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হন। ওই দিন দিবাগত রাত ১টার দিকে সিজারের মাধ্যমে তাঁর ছেলে সন্তান হয়। এরপর সেখানে আরও চার দিন চিকিৎসাসেবা নেন। চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পারায় ওই প্রসূতিতে একপর্যায়ে নবজাতককে বিক্রির জন্য চাপ দেওয়া হয়। এতে প্রসূতি অস্বীকৃতি জানায়।
এরপর ১৭ জানুয়ারি হাসপাতালের বিল পরিশোধে ব্যর্থতার অজুহাত এবং অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের পরিচালক এমএস রনি মিয়া (৫৮) ওই প্রসূতির অগোচরে তাঁর পূর্ব পরিচিত পীরজাবাদ এলাকার দম্পতি জেরিনা আক্তার বিথি ও রুবেল হোসেন রতনের কাছে প্রসূতির স্বামী ওয়াসিম আকরামের সহায়তায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

এ ঘটনায় প্রসূতি লাবনী আক্তার গতকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় আজ রোববার অভিযান চালিয়ে নগরীর পীরজাবাদ এলাকা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।
একই সঙ্গে নবজাতক ক্রয়কারী পীরজাবাদ এলাকার রুবেল হোসেন রতন, তাঁর স্ত্রী জেরিনা আক্তার বিথী ও হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক কামারপাড়া বাবু খা এলাকার এমএস রনিকে আটক করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে লাবনী আক্তার বলেন, ‘আমার মা–বাবা নেই। সৎ ঘরে মানুষ হইছি। ঢাকায় চাকরি করতাম। রনি আংকেলকে আমি আগে থেকে চিনি। ঢাকা থেকে রংপুরে এসে দেউতি বাজারে ভাড়া থাকতাম। রনি আংকেলকে আমার বাচ্চা প্রসবের সময়ের কথা বলি। তখন উনি উনার হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। তখন আমি উনাকে বলি প্রসব বেদনা উঠছে, আমার কাছে তো টাকা পয়সা নাই। কোনো সমস্যা হবে কী। তখন রনি আংকেল বলেন, কোনো সমস্যা নাই তুমি আস। টাকা পয়সা লাগবে না পরে দেখা যাবে। ওনার ওখানে গেইছি সিজার হওয়ার জন্য। ৯০০ টাকা জমাও দিছি আমি। সিজারের তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু অনেক জায়গায় আমার স্বামী টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করেও পাইনি।’

লাবনী আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা আরও দুদিন সময় চাইছি। কিন্তু বাচ্চাটা বিক্রির জন্য রনি আংকেল প্রস্তাব দিছে। বাচ্চাটা আমার কাছ থেকে বারবার চাইছে। অনেক কান্নাকাটি করছি, দেখে উনি বলেন মায়াকান্না দেখায় লাভ নাই, টাকা দাও নাই বাচ্চা বিক্রি কর। আমার স্বামী কিডনি দিতে চাইছে কিন্তু ওরা নেয় নাই। আমার দুইটা চোখ নিতে বলছি, রক্ত নিতে বলছি। কিন্তু উনি আমাদের কোনো কিছু শোনেনি। আমার বাচ্চাটাকে চুপ করে নিয়ে বিক্রি করে দিছে।’

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, সিজার করার পরে চিকিৎসার খরচ পে করার মতো অর্থ না থাকায় পরিচালক রনি প্রসূতিকে বাচ্চা বিক্রির জন্য প্রেসার দিতে থাকে। কোনোভাবে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে তাঁর স্বামী ওয়াসিমের সঙ্গে যোগসাজশ করে ৪০ হাজার টাকায় বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেয়। ওই প্রসূতি গতকাল রাতে থানায় অভিযোগ নিয়ে আসলে বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযান চালান হয়।

নবজাতক উদ্ধারসহ হাসপাতালের পরিচালক, নবজাতক ক্রয়কারী দম্পতিকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আজ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। নবজাতকের বাবা পলাতক রয়েছে তাঁকেও আটকের চেষ্টা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x