থেমে নেই লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ট্রাকের মালামাল ওজন করার ৩টি স্কেল থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ৬ চাকার ট্রাক থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ রুপি, ১০ চাকা ও ১৬ চাকার ট্রাক থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০০ রুপি এবং ২২ চাকা থেকে শুরু করে সকল লরি ট্রাক থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ রুপি পর্যন্ত। যেখানে দৈনিক চাঁদা আদায় করার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ, মাসে ৬০ লাখ, বছরে ৭ কোটি ২০ লাখ ভারতীয় রুপি। মুলত ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে এসব ভারতীয় রুপি উত্তোলন করা হয়।
স্থলবন্দরের স্কেলে নিযুক্ত থাকা কর্মকর্তাদের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করি। আপনাদের কিছু বলার থাকলে আপনারা আমাদের স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন যে, এর আগে আরও বহু সাংবাদিক এসেছিল তাদেরকেও আমরা ম্যানেজ করেছি।
আপনারা আবার কোন সাংবাদিক যে আমাদের ভিডিও করেন এবং অনুমতি ছাড়া বন্দর এলাকায় প্রবেশ করেছেন। তবে ভারতীয় বেশ কয়েকজন ট্রাক চালকের সাথে কথা হলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তারা বলেন, শুধু এই স্কেলেই নয় এর চেয়ে কম বেশি চাঁদা বুড়িমারী স্থলবন্দরের আরও বেশ কয়েক জায়গায় দিয়ে আমাদেরকে ট্রাক আনলোড করতে হয়। যেমন, গেটে ঢুকতেই ২০ রুপি, স্কেলে ৪০০ রুপি, পানামা গেটে ২০ রুপি, সিএনএফকে ৫৫০ রুপি দিতে হয়। আমরা এই চাঁদা থেকে মুক্তি চাই এবং সকল প্রকার হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই।
বুড়িমারী স্থলন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিনকে না পাওয়া গেলেও বন্দরের আর এক সহকারী (ট্রাফিক) ফরহাদ হাসান চৌধুরী বলেন, স্যারের বাবা আইসিইউতে ভর্তি থাকায় তিনি ছুটিতে আছেন। আপাতত ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত লিখিতভাবে দায়িত্ব তার কাছেই বলে তিনি জানান।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ইতিপূর্বে আপনারা তো বহুবার স্থলবন্দরে এসেছেন এখন পর্যন্ত কোন কিছু করতে পেরেছেন কি? ভবিষ্যতেও কোন কিছু করতে পারবেন কি?
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরো নভেম্বর মাস এবং ডিসেম্বরের কিছুদিনের চাঁদার জমাকৃত পরিমাণ নিয়ে ভাগবাটোয়ারার সময় বন্দরের কর্মকর্তা ও সিকিউরিটি গার্ডদের মধ্যে ব্যাপক ধাক্কাধাক্কি এবং মারামারির ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশে অনেকে জানান, টাকা ভাগাভাগির সময় সিকিউরিটি গার্ডের একজন জোর গলায় বলেন, পুরো বন্দর পাহারা দেই আমরা, টাকার ভাগ আমরাই বেশি নিবো আপনাদেরকে যা দিব তাই নিয়ে চুপচাপ থাকবেন। এমন কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে বন্দর কর্মকর্তা ওই সিকিউরিটি গার্ডকে ঘুষি মারলে পরিবেশ উত্তেজিত হয়।
ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলের দাবি, এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করে স্থলবন্দরের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা উচিত। এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দরকার।