৫ এপ্রিল পূর্ব তুর্কিস্তানের ব্যারেন বিপ্লব দিবস উপলক্ষে নিহতদের স্মরণ ও চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ ৫ এপ্রিল বুধবার দুপুর ১২টায় রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে এবং বিকাল ৩টায় রংপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ম্যূরালের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুরাদ কাওসার এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি কামরুল হাসান। আরোও বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এমরান চৌধুরী সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আকাশ, রংপুর মহানগর শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন বাধন ও আতিক রহমানসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে বিশ্বের প্রতিটি সংখ্যালঘু, শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর শাখা। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে চীনে রাষ্ট্রীয় মদদে সংখ্যালঘু উইঘুর নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর শাখা। ৫ এপ্রিল পূর্ব তুর্কিস্তানের ব্যারেন বিপ্লব দিবস। ১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল চীনের ব্যারেন শহরের সংখ্যালঘু উইঘুরদের যৌক্তিক আন্দোলনে প্রায় এক হাজার উইঘুরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
আজকের দিনে নিহতদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ১৯৩৩ সালে স্বল্প সময়ের জন্য পূর্ব তুর্কিস্তান নামে স্বাধীন দেশ পেয়েছিল উইঘুররা। পরে তা চীন দখল করে নিয়ে স্বাধীনতাকামী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করে যা এখনো চলমান রয়েছে। জাতিসংঘের দাবি অনুযায়ী, চীনের বন্দিশালায় বর্তমানে নারীসহ ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান আটক আছেন। চীনে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। বিশ্বের শোষিত এবং নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “বিশ্বের বহু অংশে এখনো অবিচার ও নিপীড়ন চলিতেছে। দুনিয়ার যেখানেই মজলুম মানুষ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো।” বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী বিশ্বের প্রতিটি নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, রংপুর মহানগর শাখা।”
রংপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক কাওসার হাসান মুরাদ বলেন, “মুক্তিকামী উইঘুর সংখ্যালঘুদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্র চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আমাদের প্রতিবাদ চলবে। ফ্রিডম ওয়াচের মতে, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিপীড়ক দেশ ও জাতি নিধনে এগিয়ে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট আহবান উইঘুর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চীনের ওপর কঠোর চাপ সৃষ্টি করে উইঘুরদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।”
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এমরান চৌধুরী সৌরভ বলেন, “বিশ্বের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে আন্দোলন ও সংগ্রাম চলমান রাখবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু উইঘুরদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। চীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে উইঘুরদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সম্প্রতি উইঘুরদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ডোপা টুপি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আকাশ বলেন, “বিএনপির শাসনামলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী ১৫ আগষ্টে চীন দূতাবাস কর্তৃক খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের উপহার পাঠানোর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছিল যে, চীন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে আজও পর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী চীনের আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। পুর্ব তুর্কিস্তান তথা উইঘুরদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। একাত্তরে চীন পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যাকে সমর্থন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা কিন্তু সেই ইতিহাস ভুলে যায়নি। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানকে চীন এখনো সহযোগিতা করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে চীন ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়াকে চীন দূতাবাস জন্মদিনের শুভেচ্ছা উপহার পাঠিয়ে তা আবারও প্রমাণ করেছিল। জিনজিয়াং প্রদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে।
উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ধর্ম ব্যবসায়ীরা এবিষয়ে নীরব কেন? এদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের উচিত পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানো। চীন সরকারের নিকট আহবান, অবিলম্বে সংখ্যালঘু উইঘুর নির্যাতন বন্ধ করে তাদেরকে স্বাধীনতা দিতে হবে। অন্যথায় চীন দূতাবাস ঘেরাওসহ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।”