ফসলী জমিতে বাধা এবং পৈত্রিক খরিদা সম্পত্তির উপর জোরপূর্বক কবরস্থানের নামে জমি দখলের অভিযোগ করে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন- আমেনা বেগম ও তার চাচার পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে উভয় পরিবারের পক্ষ হতে ফসলী জমি ও ভিটেমাটি জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। এসময় আমেনা বেগমের স্বামী তাদের জমি নিয়ে তাদের উপর একের পর এক বর্বর হামলার ছবি, ভিডিও ফুটেজ সহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের জরুরী কাগজপত্র ও নির্য়াতনের লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান।
চট্টগ্রামের আনোয়ারার খোর্দ্দ গহিরা ৩ নং রায়পুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত সিদ্দিক আহাম্মদের কন্যা আমেনা বেগম।
পারিবারিকভাবে সূত্রে চাচাত ভাই মোঃ ফারুকের সাথে বিগত ১২ বছর পূর্বে তার বিবাহ হয়। স্বামী সন্তান সবাইকে নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। মৌরশী সূত্রে তাদের নিজ পরিবার এবং চাচাত ভাইকে বিবাহ করার কারণে নিজের ও স্বামীর পরিবারের পক্ষে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হন। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে তার পিতা মৃত ছিদ্দিক আহাম্মদের অন্যান্য ভাইয়ের সন্তানেরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি বিষয়টি।
নিজ ভিটির পূর্ব পাশে ছিদ্দিক আহাম্মদের জীবদ্দশায় তিনি নিজ নামে ১৯৯৮ সালে (আর.এস. ৫০৫ ও বি.এস. ৬১ দাগে) ৩ গন্ডা সম্পত্তি খরিদ করেন ছুরুতজান, স্বামী মৃত আবদুল বারী হতে। যা ছিদ্দিক আহম্মদের সম্পূর্ণ একক খরিদা সম্পত্তি, যা মৌরশী স্বত্ব নয়। উত্তারাধিকার সূত্রে আমেনা বেগমের পরিবার পিতার খরিদা ও তাদের অংশে প্রাপ্ত মৌরশী সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদ করে আসছিল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন বিগত ২০২১ ইংরেজী তারিখে প্রথম তাদের খরিদা ও মৌরশী জমিতে চাষাবাদ করতে বাধা দেন তাদের চাচাত ভাই ১। জাহাঙ্গীর আলম, ২। মোঃ সেলিম, ৩।মোঃ ফরিদ, ৪। মোঃ জসিম। ৫। হাফেজ মোঃ জাহেদ। ৬। মোঃ হারুন। সর্ব পিতা কবীর আহাম্মদ। বিষয়টি নিয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ বরাবরে আমেনা বেগমের মাতা রোকেয়া বেগম স্ব-শরীরে হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘ ৯ মাস জবর দখলকারীরা জনবলে বলিয়ান হয়ে আমেনা বেগম ও তার স্বামীর পরিবারকে নানা ধরনের হুমকী ধমকী দিতে থাকেন এবং সম্পত্তি জবর দখলের বিভিন্ন অপকৌশল তাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
এছাড়াও আমেনা বেগম ও তার স্বামী অভিযোগ করে বলেন তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় মাদকদ্রব্য সহ বিভিন্ন বহিরাগত লোকের আনাগোনা দেখা যেত এবং জবর দখলকারীরা এক সময় বাড়ীর আঙ্গীনাকে মাদকের লেনাদেনার নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেয়। বিষয়টি আমেনা বেগম ও তার স্বামীর পরিবারের লোকজন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি এবং বাপ দাদার ভিটে মাটির সম্মান ক্ষুন্ন হবে ভেবে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে পুনরায় বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয় এবং এক পর্য়ায়ে তা চরম আকার নেয়।
স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রতিপক্ষ চাচাত ভাই জাহাঙ্গীর গং পুনরায় আমেনা বেগমের স্বামীর বসতভিটা দখলের চেষ্টা করে এবং বসতভিটার বিভিন্ন ফলফলাদির বৃক্ষ অবাধে কাটা শুরু করলে আমেনা বেগমের স্বামী মোঃ ফারুক এতে বাধা দেয়। এতে কাজ না হওয়াতে আমেনা বেগমের স্বামী বিগত ১৮/১০/২০২১ ইংরেজী তারিখে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও বসতভিটা জবর দখল এবং গাছ পালার অবাধে কর্তন বিষয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন দুপর ১২ টার দিকে।
অভিযোগের খবর পেয়ে আগে থেকে ঔঁত পেতে থাকা প্রতিপক্ষ তাদের সন্ত্রাসী গ্রুপকে সাথে নিয়ে মোঃ ফারুক থানা হতে বাড়ীর আঙ্গীনায় আসার সাথে সাথে তার উপর অতর্কিত হামলা চালাতে থাকে। এসময় ফারুক বাঁচার তাগিতে উচ্চস্বরে চিতকার করতে থাকলে বাড়ীর ভেতরে থাকা লোকজন দ্রুত এগিয়ে আসেন ফারুককে উদ্ধারে। ফলে তারাও সেলিম গংদের ভয়ঙ্কর আক্রমনের স্বীকার হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়দের সহায়তায় সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়, বিগত ১৮/১০/২০২১ ইং তারিখে। এসময় মোঃ ফারুকের মাথায় ১৫ থেকে ২০টি সেলাই হয় ও ডান পা এবং কাধেঁর বাম পাশ ভেঙ্গে যায় বলে বক্তব্যে দাবী করেন, এ ছাড়াও তার দেবর মোঃ মারুফের মাথায় সেলাই হয়, মাতা রোকেয়া বেগমের হাতে মারাত্মক জখম হয়, আমেনা বেগমের পিঠে লোহার রড দিয়ে বাড়ী মারেন বিধায় তিনি মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন এবং তার শাশুড়ী মমতাজ বেগম এর হাতে আঘাত পান।
পরবর্তীতে মেডিকেল হতে সুস্থ হবার পর আমেনা বেগম বাদী হয়ে বিগত ৪/১১/২০২১ ইংরেজী তারিখে চট্টগ্রাম মাননীয় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা নং ০২ দায়ের করেন। মামলাটি অদ্যবধি বিচারাধীন আছে।
এছাড়াও তিনি লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করে বলেন, জমির অবৈধ দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত প্রতিপক্ষ চাচাত ভাই মোঃ সেলিম ও তার মাদক সম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী গোলছাফা খাতুনকে বিগত ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ইং তারিখে নারায়ন গঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানাধীন আষাঢ়িয়ার চর এলাকায় মেসার্স বিসমিল্লাহ ফিলিং স্টেশন এর সামনে হতে র্যা ব-১১ এর একটি চৌকস অভিযানিক দলের হাতে ২১৩৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, মাদক ক্রয় বিক্রয়ের নগদ ২৪৫০ টাকা এবং মাদক ক্রয় বিক্রয়ের কাজে ব্যবহৃত ২ টি মোবাইল ফোন সহ হাতে নাতে গ্রেফতার হন।
বর্তমানেও তিনি জেলে আছেন। এত কিছুর পরেও তারা কবরস্থানের নামে জমির অবৈধ দখল নিতে অদ্যবধি মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং বিগত ৯/১১/২০২২ ইংরেজী তারিখে তাদের খরিদা জমির এবং মৌরশী সূত্রে প্রাপ্ত জমির ফসল অবৈধভাবে কেটে নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে মোঃ ফারুক বাদী হয়ে ৯/১১/২০২২ ইং তারিখে স্বশরীরে হাজির হয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ বরাবরে আবারো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্থ কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা কোথায় গেলে এসব সন্ত্রাসীদের বিচার পাব জানিনা, তবে এতটুকু জানি এমন জঘন্য অপরাধীদের বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দিলাম। আমরা আশাবাদী নিশ্চয়ই মাননীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদের এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আমরা আশা করছি।