যাত্রী অধিকার দিবসে আলোচনা সভায় বক্তারা

এম মনির চৌধুরী রানা
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
আলোচনা সভায় বক্তারা
4.6kভিজিটর

রাজধানীতে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য চলছে ।যাত্রী কল্যাণ সমিতি যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রী সাধারনের কাছ থেকে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এহেন ভাড়া নৈরাজ্যের কারনে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।আজ ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ৪র্থ যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত “অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ চাই” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিযোগ তুলেন।সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,

গত ১ বছরে দুইবার জ¦ালানীর তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে উঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোন পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এই সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহগুলোতে ২৫ টি যাত্রী লাঞ্চনার ঘটনা ঘটে। এতে বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ১০ জন যাত্রী। এতে গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রী সাধারণের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয়। ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগষ্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, জাইকার সমীক্ষানুযায়ী রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়।

গত এক বছরে দুই দফা জ¦ালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরে গণপরিবহনে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও এই ভাড়া নৈরাজ্য থামাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। কোন কোন পরিবহনে দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণকালে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মালিকের দৈনিক জমা, জ¦ালানীর উচ্চ মূল্য, সড়কের চাঁদাবাজী, গাড়ির মেরামত খরচ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে তারা এহেন ভাড়া নৈরাজ্য চালাতে বাধ্য হচ্ছে। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, রাজধানীতে যাত্রী সাধারণের যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়ার নামে আদায় করছে বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনগুলো।রাজধানীর ৫০০০ বাস-মিনিবাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। লক্কড়-ঝক্কড় এসব সিটি সার্ভিসের শতভাগ বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব বাস-মিনিবাসে যাতায়াতে যাত্রী প্রতি মাথাপিছু গড়ে ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এতে ৫০ লক্ষ ট্রিপ যাত্রী দৈনিক গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে।

এছাড়াও রাজধানীতে ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরো ১৫ হাজার ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় নিবন্ধিত অটোরিক্শা অবৈধভাবে চলাচল করে। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসেবে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে। এসব অটোরিক্শায় প্রতিট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লক্ষ টাকা।হিউম্যান হলারের ভাড়া নির্ধারণের আইন থাকলেও সরকার ভাড়া নির্ধারন না করায় এখানে বরাবরই দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে নি¤œআয়ের যাত্রী সাধারণকে। ১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদোর্ত্তীণ, লক্কড়-ঝক্কড়, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরী আরো প্রায় ১৮ হাজার হিউম্যান হলারসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতিট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, ট্যাক্সিক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে। এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এহেন ভাড়া নৈরাজ্যের কারনে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। এহেন ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে এবারের যাত্রী অধিকার দিবসের অন্যতম দাবী :১. পরিবহন খাত আমুল সংস্কার করতে হবে। পরিবহনে চাঁদাবাজী ও অনৈতিক লেনদেন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে। নগদ লেনদেন বন্ধ করতে হবে।২. ভাড়া নির্ধারণে মালিক সমিতি একচ্ছত্র আধিপত্য বন্ধে অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের কারিগড়ি জ্ঞান সমৃদ্ধ লোকজন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে বাসভাড়া নির্ধারণ কমিটি পূণর্গঠন করতে হবে।৩. ব্যয় বিশ্লেষণের নামে মালিক সমিতির প্রেসক্রিপশনকে সঠিক ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। ভাড়া নির্ধারণে ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির তালিকা মাঠ পর্যায়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও ক্যাবের প্রতিনিধি নিয়ে যাচাই বাচাই করে চূড়ান্ত করে ভাড়া নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৪. বাস ভাড়ার তালিকা সংস্কার করতে হবে। যাত্রীসাধারণ শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলে বুঝে, এমন ভাড়ার তালিকা বড় হরফে ডিজিটাল ব্যানারে বাসের ভিতর সাটাঁনোর ব্যবস্থা নিতে হবে।৫. পজ মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকিট প্রদান করে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে।৬. ওয়েবিলের নামে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিস, গেইটলক সার্ভিস বন্ধ করতে হবে।৭. গণপরিবহনের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, আসন যাত্রী সাচ্ছন্দে বসার উপযোগী রাখতে হবে।৮. গণপরিবহনের বাহ্যিক পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x