একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় মোংলার চিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেয়াবুনিয়া এলাকার শতাধিক পরিবার ১০ দিন ধরে গৃহবন্ধী অবস্থায় রয়েছেন। ফলে বাড়ীঘর থেকে বের হতে পারছেন কেউই। এতে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে ওই সকল পরিবারের সন্তানদের। আর বাড়ীর বয়স্করা কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে ও খাল সাঁতবিয়ে যাতায়াত করছেন বাড়ী ঘরে। এ পরিবারগুলো তাদের বাড়ীর সামনের ভরাট হওয়া সরকারী খালের উপরের পথ দিয়েই যাতায়াত করে আসছিলেন।
কিন্ত ভরাট হওয়া ওই খালের সন্নিকটে স্থানীয় প্রভাবশালী বিনসেন নাথের জমি রয়েছে। সেই জমি দেখভালের দায়িত্বে থাকা শ্যামল নাথ গত ৩১ আগস্ট সরকারী খালের পথসহ বিনসেন নাথের জমি ঘিরে ফেলেন।
শুধু জমিই ঘেরননি, পূর্বের যাতায়াতের রাস্তার খালও ঘিরে নিয়েছেন। ১০/১২ বছর আগে বালুতে ভরাট হওয়া খালের রাস্তা ঘিরে সেখানে সবজীর চারা রোপন ও বাঁশ-খুটি এবং নেট-জালের বেড়া-মাচা তৈরি করে শতাধিক পরিবারের চলাচলের রাস্তাটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন শ্যামল নাথ গং। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া ভুক্তভোগী আনিস, অজুফা, ফাতেমা, বরকত ও বিশ্বজিৎসহ অন্যান্যরা বলেন, রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় তাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছেনা।
এছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা অসুস্থ হলে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে হাসপাতালে ও নিত্যপ্রয়োজনে হাট-বাজারেও যেতে পারছেন না। ভুক্তভোগী মালেক সরদার বলেন, বুধবার রাতে তার মেয়ে শাফিয়া বেগম প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও যাতায়াতের পথ বন্ধ থাকায় সময় মতো তাকে হাসপাতালে নিতে পারেননি তারা। পরদিন হাসপাতালে নিলে শাফিয়া সেখানে মৃত সন্তান প্রসব করেন। সরকারী ভরাট খালের পুরানো রাস্তা খুলে দেয়ার দাবীতে এবং খাল দখলদারদের বিরুদ্ধে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধন করছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়া সরকারী খালের উপরের রাস্তা দিয়েই তারা যাতায়াত করে আসছিলেন দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্ত স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার হালিম হাওলাদার ও বর্তমান ইউপি মেম্বার ইসারাত ফকির ইন্ধন দিয়ে জমির প্রকৃত মালিক ঢাকায় বসবাস করায় তার ভাইপো শ্যামল নাথকে দিয়ে সরকারী খালের জায়গাসহ বিনসেন নাথের জায়গা ঘেরাবেড়া দিয়ে ঘিরিয়ে দিয়েছেন।
এ ঘেরাবেড়া দেয়া শ্যামল নাথ ও তার সহযোগী ইবাদুল সরদার ও অসিম শেখ বলেন, এখানে বিনসেন নাথের জায়গা রয়েছে, তাই তার নির্দেশেই এ ঘেরাবেড়া দেয়া হয়েছে। তবে সরকারী খালের রাস্তাসহ কেন ঘিরেছেন তার জবাবে তারা বলেন, এখানে খাল থাকলেও সেটিও বিনসেন নাথের জমির মধ্যের তাই ঘেরা হয়েছে। আর অবরুদ্ধরা কোথা থেকে যাতায়াত করবেন সেটি তাদের ব্যাপার বলেও জানান তারা।
এদিকে পূর্বের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ও ওই রাস্তা পুনরায় উম্মুক্ত করে দেয়ার দাবীতে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। তবে এখনও পর্যন্ত এ অভিযোগের কোন প্রতিকার মেলেনি।
এ ঘটনার বিষয় জানতে উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার ইসারাত ফকির ও সাবেক মেম্বার হালিম হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন, বিষয়টি মিমাংসার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, আগামী সপ্তাহে এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।