ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারের অগ্রগতি সংকুচিতভাবে এগুচ্ছে। ২০১৯ সালের টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ছিল নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড। দেশের আনাচে কানাচে থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে বর্বরোচিত এ হত্যার ঘটনায়।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নিজ অফিস কক্ষে ডেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেয়ার লোভ দেখিয়ে যৌন হয়রানি করেন নুসরাতকে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নুসরাতের মা শিরীন আখতার। ওইদিন পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর মামলা তুলে নিতে তার অনুগতরা নুসরাত ও তার পরিবারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের লোকজন নুসরাতকে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে সাইক্লোন শেল্টারে ছাদে ডেকে নিয়ে হাত পা বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নুসরাতের শোর চিৎকারে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্থর করা হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রেরণ করা হয়। ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ৬১ কার্য দিবসে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ২৪ অক্টোবর রায়ের নির্ধারণ করেন। রায়ে অভিযোগপত্রে অর্ন্তভূক্ত ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও মাদ্রাসা গভর্নিং কমিটির তৎকালীন সহ সভাপতি রুহুল আমিন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), নুরউদ্দিন, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), প্রভাষক আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় ফেনীর আদালত,
পরবর্তীতে আসামীপক্ষ উচ্চ আদালতে আবেদন করলে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
এছাড়াও আসামিদের পরিবারের সদস্য কর্তৃক ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুসরাতের পরিবারের সদস্যের নিয়ে খারাপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং পোস্ট করা হয়,,
বিশেষ করে হুমকি তো আছেই “
যা নিয়ে সর্বদা আতংকিত থাকে নুসরাত জাহান রাফির পরিবার,