মোস্তফা ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই বেশ ডানপিটে ও পরিশ্রমী। লেখাপড়া বেশি দূর না শেখায় আর্থিক চাপে পড়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ শিখে ফেলেছে। ১০ বছর আগে বিয়ে করে তার বর্তমানে তিনটি সন্তান রয়েছে। মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে বছর পাঁচেক আগে লাভলীর বাসায় লাভলীর সাথে তার পরিচয় হয়। কিন্তু তখনও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। মোস্তফা ও লাভলীর বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় তাদের মধ্যে রাস্তায় যাওয়া আসার পথে দেখা-সাক্ষাৎ হতো।বছরখানেক আগে তাদের দুজনের মধ্যে ভরে ওঠে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক।
গত চার পাঁচ মাস আগে মোস্তফা লাভলীর কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার হিসেবে নেয়। টাকা ফেরত দিতে দেরি হলে লাভলী ও তার পরিবারের লোকজন জোর করে বাজারের মধ্যে মোস্তফা কে আটক করে তার কাছ থেকে ৫০০০ টাকা আদায় করে ছাড়ে। এরপর লাভলী মোস্তফার সাথে পুনরায় তার পুরাতন প্রেমের সম্পর্ক নতুন করে জাগিয়ে তোলে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঢাকায় চলে যাবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা দুজন নিজ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়। একসাথে দেখা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা সে রাতেই রাত বারোটার বাসে করে ঢাকায় চলে যাবে। কিন্তু ইতোমধ্যে মোস্তফার মোবাইলে তার স্ত্রী ফোন করে বলে তার ছোট বাচ্চাটি কান্নাকাটি করছে বিস্কুটের জন্য। সে যেন বাইরে থেকে বিস্কুট কিনে নিয়ে এসে বাসায় তার বাচ্চা কে দেয়। একথা মোস্তফা মোবাইলে শোনার পরে সে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং মোস্তফা চিন্তা করতে থাকে তার তিন তিনটে বাচ্চা, তার স্ত্রী এদের সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন একটি বিয়ে করে সুখী হতে পারবে কিনা? আবার এটিও চিন্তা করে এই মুহূর্তে যদি সে তার নতুন প্রেমিকা লাভলীকে বলে যে, সে তাকে বিয়ে করবেনা তাহলে লাভলীও তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে পারে।
এসব কথা অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করতে করতে সে দিশেহারা হয়ে যায়। রাতের বেলা নির্জন জায়গায় তারা দুজন বসে বসে যখন চিন্তা করছিল যে তারা ঢাকায় চলে যাবে, মোস্তফার মনে নতুন টানাপোড়েন তাকে মানসিকভাবে ভীষন বিপর্যস্ত করে ফেলে এবং চিন্তা করে লাভলী কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলে তার আর কোন ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এই কথা চিন্তা করে সে ঐ নির্জন স্থানে লাভলীকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাশের ভুট্টাক্ষেতে রেখে পালিয়ে চলে যায়। অবশেষে চার দিন, চার রাত নিরলস পরিশ্রম করে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ডিমলা থানা পুলিশ মোস্তফাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং স্বেচ্ছায় সে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এরকম একটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামি গ্রেপ্তার মাত্র চার দিনের মধ্যেই সম্ভব করেছে ডিমলা থানা পুলিশ নীলফামারী জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, বিপিএম, পিপিএম এর দিকনির্দেশনায় ডিমলা থানার ইনচার্জ অফিসার সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ)।