গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রোকসানা আহমেদ রোজী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তাঁর অন্ধকারজগতের নানা তথ্য।
তিনি বিউটি পার্লারের আড়ালে তরুণীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে গত শুক্রবার তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর পরই মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয় লোকজন এবং এলাকাবাসী।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের যোগীতলা এলাকার বাসিন্দারা জানায়, কলেজজীবন থেকেই বেপরোয়া জীবন যাপন করতেন তিনি। তাঁর কাছে আসতেন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এবং কি বিয়ে করেছেন তিনটি। নিজের রূপ আর কথার জাদুই তাঁর সব কাজের হাতিয়ার। তাঁর বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বাবার ইমেজ এবং নির্বাচিত হলে নিজেকে বদলাবেন—এ ধারণা থেকে এলাকার মানুষ তাঁকে দুই হাত ভরে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর বানায়, কিন্তু নির্বাচিত হয়ে একটুও বদলাননি, বরং হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৬, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর হওয়ার আগে রিকশায় চলাফেরা করতেন। নির্বাচনের পর থেকে চালচলনে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। রিকশা ছেড়ে চলাফেরা করেন বিলাসবহুল গাড়িতে। সম্প্রতি শুরু করেছেন পাঁচতলা বাড়ির কাজ।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করে ১০-১২ বছর আগে রোজী পাড়ি জমান ঢাকার উত্তরায়। সেখানে একটি বাসা ভাড়ায় অল্প কিছু মেশিন বসিয়ে মিনি গার্মেন্ট চালানোর আড়ালে তরুণী দিয়ে দেহ ব্যবসা চালাতেন। পরে সেই স্থান ত্যাগ করে টঙ্গীতে একই কারবার করতেন। জানাজানি হলে নির্বাচনের আগে এলাকায় ফিরে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হন। এরপর শুরু করেন বিউটি পার্লারের আড়ালে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তরুণী দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা। পাশাপাশি সড়কের সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, জন্ম ও ওয়ারিশান সনদের জন্য মোটা ফি, ভোটার বানানো, বয়স্ক ভাতা, ভিজিএফসহ সব ধরনের সেবার জন্য টাকা হাতাতে শুরু করেন।
এলাকার সাবেক নারী কাউন্সিলর আমেনা খাতুন বলেন নির্বাচনের আগে রোজীর সম্পর্কে অনেক কিছু শুনলেও বিশ্বাস করিনি। এখন তো হতবাক। এলাকায় মুখ দেখাতে পারছি না। আসলে পাপ চাপা দেওয়া যায় না। একসময় বের হয়ে আসেই।’
এদিকে গ্রেপ্তারের আগে টঙ্গীতে গোপনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কাউন্সিলর রোকসানা আহমেদ রোজী দাবি করেন, প্রতিপক্ষের লোকজন বাদীকে ফুঁসলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের, জোরপূর্বক আটকে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করে পার্লারকর্মী কিশোরী। শুক্রবার রোজীকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার তাঁকে থানায় সোপর্দ করেছে র্যাব। গতকাল দুপুরে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।