ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে মধুমতীর বুকে থাকা লঙ্কারচর বালুমহল যেন বিভেদের এক নতুন নাম। টাকা ভাগাভাগির জটিলতায় শেষ পর্যন্ত রক্ত ঝরল — আক্রান্ত হলেন তিনজন। সময়টা ছিল গভীর রাত, জায়গাটা মা ফার্মেসি চত্বর। আর ঘটনাটি—একটি বালুমহলের নিলাম ঘিরে দ্বন্দ্ব, যা রূপ নেয় সংঘর্ষে।
সূত্রে জানা যায়, ১৪৩২ বাংলা সালের জন্য লঙ্কারচর বালুমহল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। দরপত্রে অংশ নেয় প্রায় ১৫ জন, পরে তাদের মধ্যেই গোপনে সমঝোতার ভিত্তিতে টাকার লেনদেন হয়।
কিন্তু সেই অর্থের বণ্টন ঘিরেই শুরু হয় টানাপোড়েন। অভিযোগ ওঠে, আঁধারকোঠা গ্রামের জামায়াতপন্থী কর্মী জুয়েল বিশ্বাস তার পাওনা টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
বুধবার রাতে স্থানীয় বিএনপি নেতা রাসেল আহমেদ, মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা একটি সালিশ বসান। সেখানে উপস্থিত হন জুয়েল বিশ্বাস। সালিশের মাঝেই জুয়েলের কোমরে থাকা দেশীয় অস্ত্র চোখে পড়ে লোকজনের।
তখনই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ঘটে প্রথম ধস্তাধস্তি। এরপর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে মূল ঘটনা—২৫-৩০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মা ফার্মেসিতে হামলা চালায়।
সিসিটিভি ফুটেজ বলছে, কাঠের বাটাম ও লোহার রড হাতে হামলাকারীরা ফার্মেসিতে ঢুকে পড়ে। আশ্রয় নেওয়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার মাথায় আঘাত করে তারা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে আহত হন ফার্মেসির মালিক রিয়াজ মৃধা। দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও রবিন এখনো চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। জুয়েল বিশ্বাস দাবি করেন, তিনি টাকা চাইতে গেলে রাসেল আহমেদ তাকে ফাঁদে ফেলে মারধর করেন।
অন্যদিকে রাসেল বলেন, “জুয়েল আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসে। পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আমার ভাইকে আহত করেছে।”
বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধাও বলেন, “আমার ফার্মেসিতে আলোচনার ছলে ঢুকে সে অস্ত্র নিয়ে আসে। পরে পালিয়ে গিয়ে দুর্বৃত্তদের নিয়ে হামলা চালায়।”
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকাল ৬.৩০ মিনিটেও পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।