ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তাল বরিশালের হিজলা উপজেলা। বিগত ৮ মাসে উপজেলার মেঘনা নদী ও এর শাখা নদীগুলোতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মামলা হামলা, ড্রেজার আটক করে কয়েকদফা জরিমানাও করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
বিগত কিছুদিন যাবত অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন কিছুটা সীমিত হলেও এবার এসব অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীরা বেছে নিয়েছেন নতুন পথ।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নৌপথ ড্রেজিং কর্মসূচিকে টার্গেট করে হিজলা উপজেলার মৌলবির হাট লঞ্চ ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর আশপাশ এলাকায় প্রায় ৩০ একর ফসলী জমি কেটে বাধ দিয়ে বালু সংরক্ষণের জন্যে যায়গা নির্ধারণ করে রেখেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ। আজ ৪ঠা এপ্রিল বাদ আসর মৌলবির হাট এলাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা দাবী করেন উপজেলার কালিকাপুর, পশ্চিম ডাইয়া, পূর্ব ডাইয়া, শ্রীপুর ও গুয়াবাড়িয়া সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো নদী ভাঙ্গন কবলিত হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিদফতর থেকে বাধ নির্মাণের জন্যে ৬শত কোটি টাকার কাজ চলমান এবং উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ৩টি ইউনিয়নে সাব মেরিন ক্যাবল এর মাধ্যমে নেয়া বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনটি ড্রেজিং কর্মসূচির আওতাধীন এলাকায়।
তাই চলমান ড্রেজিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে বাধ নির্মাণ, সাব মেরিন প্রকল্পের মাধ্যমে নেয়া বিদ্যুৎ সংযোগটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেনেও একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে এই ড্রেজিং কর্মসূচি। তাই মৌলবিরহাট লঞ্চ ঘাট এলাকায় ড্রেজিং কর্মসূচিটি বন্ধের দাবীতে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি, আশানুরূপ কোন ফল না পেয়ে আমরা আজ মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে দাবী বক্তাদের।
তারা আরো বলেন ড্রেজিং কর্মসূচির আওতাধীন এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০ একর জমিতে মাটি দিয়ে বাধ তৈরি করে কার স্বার্থে বালু মজুদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে!
হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী'র ছেলে হিজলা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি, পিবিসি ইট ভাটার কর্নধার নজরুল ইসলাম ঢালী বালু সংরক্ষণের জন্যে জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছেন প্রায় ৫ একর, যার বেশিরভাগই ফসলি জমি, এবিষয়ে তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বালু সংরক্ষণ করবেন বলে স্বীকার করেন যা পরবর্তীতে তার ইটের বাটায় ইট তৈরিতে কাজে লাগবে বলে জানান তিনি।
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর পরিচালনা কমিটির সদস্য নুর নবী এর সাথে চলমান ড্রেজিং কর্মসূচিতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদী দিয়ে নেয়া বিদুৎ সংযোগটি কি ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর যদি তা হয় তবে ৩টি ইউনিয়নের নাগরিকদের দুর্ভোগের শিকার হতে হবে।
কারণ এই সাবমেরিন ক্যাবলটি আমাদের দেশে পাওয়া যায়না, বিদেশ থেকে আনতে হবে, তাতে অনেক সময় লাগতে পারে।
এবিষয়ে বিআইডব্লিউটি এর বরিশাল বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মামুন এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন আমরা মানববন্ধনের বিষয়টি জানতে পেরেছি, যদি স্থানীয়রা না চায় তবে হবেনা, আমরা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহাদয়ের বিশেষ সুপারিশ ও স্থানীয়রা একাধিকবার ফোন করে দাবী করায় চ্যানেলটি ড্রেজিং করে চালু করতে চেয়েছি, এখন অফিস বন্ধ, অফিস খুলুক তারপর সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এবিষয়ে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ইলিয়াস হোসেন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন এবিষয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা এবং আজকের মানববন্ধনের বিষয়টিও আমি জানতে পেরেছি তবে আমি তাদের বুঁজিয়ে বলেছি এবং পরামর্শ দিয়েছি যে বিষয়টি আমাদের হাতে নেই, যেহেতু এটা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এবং এটা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয় এর নিজের এলাকা তাই আপনারা কয়েকজন একটু তার সাথে যদি যোগাযোগ করে কথা বলতে পারেন তাহলে ভালো হয়, আর আমি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি।
অসাধু বালু ব্যাবসায়ীদের বালু মজুদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান যদি থাকে তবে তাদেরকে বালু দিতে পারে অন্যথায় বালু মজুদ করে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে, নিদিষ্ট কোনো ব্যক্তির বালু নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অপরাধীর খোজে প্রতিদিন, যেকোন খবর প্রকাশের জন্য মেইল করুন- wsbnews24@gmail.com
Copyright © 2025 wsbnews24.com. All rights reserved.