শিরোনাম:
রূপগঞ্জের চনপাড়ায় মাদক বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল গোপালগঞ্জে দুই ছাত্র সমন্বয়ক সন্ত্রাসী হামলার শিকার! হিজলায় বজ্রপাতে নিহতের পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা। বালু ইজারার টাকা নিয়ে বিভেদ, শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত সংঘর্ষে পরিণতি—আহত ৩ তথ্য দিতে অপারগতা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫০০ কোটি টাকা প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম। আলফাডাঙ্গায় কৃষকদল নেতাকে স্ত্রী ও সন্তান কুপিয়ে হত্যা করেন জেলা পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত পিরোজপুর জেলা পুলিশের উন্নয়ন করে প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ আবু নাসের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংস্কার ছয় লেনে উন্নীত করার নির্দেশনা চট্টগ্রামে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান

সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তালাবদ্ধ শিক্ষক 

আব্দুর রশীদ তারেক নওগাঁ
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫
30.2kভিজিটর

সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এক শিক্ষককে থানায় ডেকে নিয়ে এসে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ওসি নুরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। লক্ষ্মী রাণী নামের এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে নারী ও শিশু ডেস্কে সাড়ে তিন ঘন্টা আটক করে রাখেন তিনি। 

বিষয়টি জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে সেই শিক্ষককে ওসির রুমে নিয়ে এসে বসান। এদিকে একসময় খুব গর্ব করে মামলা দেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করেননি ওসি। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার বিকেলে নওগাঁ সদর মডেল থানায়।

ভূক্তভোগী শিক্ষকের নাম নগেন্দ্র নাথ দেবনাথ। তিনি শহরের চক প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সহকারী শিক্ষক এবং গণমাধ্যমকর্মী মিলন চন্দ্র দেবনাথের বড় ভাই। তার গ্রামের বাড়ি পার-বাঁকাপুর হলেও দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানেই থাকছেন। আর শহরের হাট-নওগাঁ এলাকার  অভিযোগকারী লক্ষ্মী রাণী সুদের ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা। যদিও সুদের বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ থানার ওসি ও লক্ষ্মী রাণীর পক্ষে আসা প্রভাবশালী প্রতিনিধিরা। 

জানা যায়, ব্যবসার কাজে ২০১৬ সালের দিকে লক্ষ্মী রাণীর কাছ থেকে চড়া সুদে তিন দফায় মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছিল শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ। সেই টাকার বিপরীতে লক্ষী রাণীকে মাসিক মুনাফা হিসাবে ২২ হাজার টাকা দিতে হতো। একদিকে ব্যবসায় লোকসান, অন্যদিকে একের পর এক ঋণের বোঝা মাথায় চেপে বসে নগেন্দ্র নাথের ওপর। তাই একসময় পালিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। এদিকে মুনাফা দেওয়া বন্ধ হওয়ায় ততকালীন ক্ষমতাধর সেলিম তরফদার এমপির সুপারিশে লক্ষ্মী রাণীর শ্বশুরাড়ি জেলার মহাদেবপুর উপজেলার এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ২০২১ সালে কয়েকটি ফাঁকা চেক ও স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয় শিক্ষক নগেন্দ্র’র কাছ থেকে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ওসির রুমে অনেক ভীড়। সেখানে একাধিক গণমাধ্যমকর্মীসহ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির উপস্থিতি। সুদের টাকা আদায়ে ব্যস্ত সেখানে উপস্থিত প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। কাজেই ওসির রুমেই শেষ পর্যন্ত টাকা দিবেন কিনা হুমকি দিয়ে বসেন সেখানে উপস্থিত এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। 

ভূক্তভোগী শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ দেবনাথ বলেন, বুধবার হঠাৎ সাড়ে ১২টার সময় নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি স্যারের কল পেয়ে থানায় আসি। থানায় এসে জানতে পারি লক্ষ্মী রাণী নামের একজন আমার নামে অভিযোগ করেছে। 

নগেন্দ্র নাথ বলেন, লক্ষ্মী রাণীর কাছে থেকে সুদের উপর টাকা নিয়েছিলাম। বিভিন্ন সময় সুদের টাকা দিয়েছি। একসময় টাকা দিতে অপরাগত প্রকাশ করায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি স্যার আমাকে এখনই টাকা দিতে বলেন। যদি না দিতে পারি, তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে কোর্টে চালান করে দিবে। 

তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে আমাকে সোয়া একটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত থানাতে আটকে রাখে। পরে আমার প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং কালিতলার মিঠু নামের এক ভাইয়ের সহযোগীতায় এবং ওসি স্যারের হস্তক্ষেপে আগামী রবিবার এই বিষয়ে একটি মিটিং হবে। সেখানে অল্প করে ২-৪হাজার টাকা লক্ষ্মী রাণীকে দেওয়ার শর্তে আমাকে থানা থেকে ছেড়ে দেন ওসি স্যার।

ইতিমধ্যে আমি তাকে সুদ বাবদ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা শোধ করেছি। এবং তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে ৭০হাজার টাকা শোধ করেছি। অথচ এই লক্ষ্মী রাণী পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এখন আমার একটাই চাওয়া আমি যেন একটা সুষ্ঠ পরিবেশে চাকরি করতে পারি। এবং এর একটি সঠিক সমাধান হয়। 

একইভাবে সঠিক সমাধান চেয়ে তার ছোট ভাই মিলন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমার দাদাকে ওসি ডেকে নিয়ে এসে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। টাকাগুলো ফেরত দিলে মামলা দিবেনা, অন্যথায় মামলা দিবে বলে একপ্রকার হুমকি দেয়। সুদের পাওনা টাকার জন্য তিনি আমার দাদার সাথে এমনটি করলেন। যা মোটেও কাম্য নয়। আর ওই মহিলা কি অভিযোগ দিয়েছিলেন সেটা ওসি ব্যাখ্যা দিবেন। লক্ষ্মী রাণী আমার দাদার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে। 

যদিও অভিযোগকারী এসেছেন প্রায় কয়েক ঘন্টা পর। এদিকে তিনি ওসির সামনে আরও দুই একজনকে টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। নগেন্দ্র নাথ লাখে দুই হাজার টাকা লাভ দিতে চেয়েছে বলে ওসির সামনে স্বীকার করেন লক্ষ্মী রাণী। এবং সেটা দিতে চেয়েও দেননি বলে মৃদস্বরে অভিযোগ করেন। এছাড়া আরও একজনকে এভাবে টাকা দিয়েছেন। এরপর বাহিরে এসে পুরোপুরি উল্টো সুর। 

শোনেন ভাই আমি একটা গরীব মানুষ। ওই চ্যাংরা (শিক্ষক নগেন্দ্র) আমার বাসায় পড়াতো। আমি ওকে টাকাটা ধার দিছি। ওই টাকাটা নিব, এই জন্য আমি এসেছি এভাবেই বলেন লক্ষ্মী রাণী। সর্বশেষ টাকা দিতে রাজি হয়েছে। তাই মামলা করবো না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তারা সবাই বসে মিউচাল করে দিবে। আর এক টাকাও মুনাফা দেয়নি সে। আমি এমনিই তাকে ধার দিয়েছি। সুদের ব্যবসা করিনা।

তার পক্ষে সাফাই গেয়ে ওসি বলেন, দাদন ব্যবসায়ী তারাই হয়, যাদের পেশি শক্তি থাকে। অভিযোগ হয়েছে, মামলা দিবো। তদন্ত ছাড়াই।

এ বিষয়ে জেলার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে গণমাধ্যম কর্মীরা একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক এর কার্যালয়ের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) সারোয়ার জাহান বলেন,সুদের টাকা আদায়ের জন্য কাউকে থানায় আটকে রাখার আইনগত ভাবে কোন বিধান নেই, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
কপিরাইট ©২০০০-২০২২, WsbNews24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
Desing & Developed BY ServerNeed.Com
themesbazarwsbnews25
x