
নদী রক্ষা বাঁধ কেটে পরিবেশ ও জনজীবন হুমকির মুখে। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা জুড়ে চলছে অবাধ ও বেপরোয়া অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। রাস্তা-ঘাট ধ্বংস, আবাদি ফসলের মাঠ নষ্ট এবং ধরলা নদীর রক্ষা বাঁধ কেটে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের ফলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ডাংগিরপার এলাকায় ধরলা নদীর রক্ষা বাঁধ কেটে একটি প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিভিন্ন মহলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও জড়িত রয়েছেন।
বাঁধ কেটে ট্রলি চলাচলের রাস্তা :
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিসি ব্লক সরিয়ে বাঁধ কেটে নদী থেকে সরাসরি ট্রলি চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ওই কাটা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
৩০–৩৫টি পয়েন্টে প্রতিদিন শত শত ট্রলি :
পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ঘাটেরপাড়, ব্রিজের পাড়, মাষানটারি, পেদিরবাড়ি, কাউয়ামরি, বাংলাবাড়ি, মির্জার কোট, কুচলিবাড়ী, রাবারড্যাম, ডাংগিরপারসহ প্রায় ৩০–৩৫টি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ৩০০–৪০০ ট্রলি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালু লালমনিরহাট–বুড়িমারী মহাসড়কের দুই পাশে স্তুপ করে রেখে ট্রাকে লোড করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন, নদীভাঙন এবং অকাল বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ভারী ট্রলি ও ট্রাক চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঝুঁকিতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ :
অবৈধ বালু পরিবহনের কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা।
বেলতলী এলাকার বাসিন্দা লতিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির সামনে দিয়ে শত শত ট্রলি দ্রুত গতিতে চলাচল করে। এতে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
বাংলাবাড়ি এলাকার আলম মিয়া জানান,রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদের এলাকায় রিকশা বা অন্য কোনো যানবাহন আসে না। রোগী পরিবহনসহ যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য :
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের সহকারী প্রকৌশলী চঞ্চল চৌধুরী বলেন,
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল ইসলাম জানান, ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ধরলা নদী ও আশপাশের জনপদ ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে।
অপরাধীর খোজে প্রতিদিন, যেকোন খবর প্রকাশের জন্য মেইল করুন- wsbnews24@gmail.com
Copyright © 2025 wsbnews24.com. All rights reserved.